ইউরোপে করোনা ভয়ংকর রূপ নিচ্ছে

প্রকাশঃ সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২০ সময়ঃ ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ.. সর্বশেষ সম্পাদনাঃ ১০:৪৩ পূর্বাহ্ণ

ডেস্ক রিপোর্ট

করোনাভাইরাস ইউরোপে ভয়ংকর আকার ধারণ করছে। নতুন করে সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে চলতি সপ্তাহেই জরুরি অবস্থা জারি করতে যাচ্ছে চেক প্রজাতন্ত্র ও স্লোভাকিয়া। সবচেয়ে সংকটজনক অবস্থা স্লোভাকিয়ায়।

বেশির ভাগ বড় জমায়েত বুধবার থেকে নিষিদ্ধ করেছে দেশটি। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) বলেছে, করোনা মৌসুমি সংক্রমণ ব্যাধিতে পরিণত হতে পারে। দুনিয়াজুড়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৫ লাখ ছাড়িয়েছে। বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় আন্তর্জাতিক জরিপ সংস্থা ওয়ার্ল্ডওমিটারস এ তথ্য জানিয়েছে। কোভিড-১৯ এ বিশ্বজুড়ে মৃত্যু ১০ লাখ ছাড়িয়েছে বলে জানিয়েছেন গবেষকরা।

মাত্র ১৫-৩০ মিনিটের মধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফল জানাতে সক্ষম এমন কিট বিতরণ হবে বিশ্বজুড়ে। এর ফলে হয়তো বেঁচে যাবে লাখো প্রাণ। জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস করোনা মহামারীতে বিশ্বের ১০ লাখ মানুষের মৃত্যুকে ‘যন্ত্রণাদায়ক মাইলফলক’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। এএফপি, বিবিসি, এপি, সিএনএন, আলজাজিরা ও আনন্দবাজার।

স্লোভাকিয়ায় প্রধানমন্ত্রী ইগোর ম্যাটোভিক সোমবার (স্থানীয় সময়) এক বিবৃতিতে বলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত ১ অক্টোবর থেকে বড় গণজমায়েত বন্ধ থাকবে। জরুরি অবস্থা জারির কথা ভাবছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র চেক প্রজাতন্ত্রও। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদে জরুরি অবস্থা সম্পর্কিত প্রস্তাব উত্থাপনের কথা ছিল দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রী রোমান প্রিমুলার। ইউরোপে বর্তমানে যেসব দেশে সবচেয়ে বেশি সংক্রমণের হার, তার মধ্যে অন্যতম চেক প্রজাতন্ত্র। তবে কয়েক দিনে সেখানে এ হার কিছুটা কমেছে।

করোনা মহামারীর কারণে লকডাউন দেয়ার পর প্রথমবারের মতো মেইন শিফ ৬ নামের একটি প্রমোদতরী গ্রিসের জলসীমায় প্রবেশ করেছে। তা পৌঁছেছে পিরাউস বন্দরে। সেখানে এর আরোহীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হচ্ছিল। এর আগে ১২ ক্রুর শরীরে করোনাভাইরাস পজিটিভ পাওয়া যায়। এর ৯২২ জন যাত্রীকে জাহাজে ওঠার আগে করোনা নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখাতে হয়নি।

নতুন করে মাস্ক পরার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করছে নেদারল্যান্ডসও। দেশটির বড় বড় শহরে মাস্ক পরতে আহ্বান জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার রাত ১০টা থেকে ক্যাফে ও রেস্তোরাঁ বন্ধ রাখার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। যুক্তরাজ্য, স্পেন ও ফ্রান্সে একই সময়ে এসব বন্ধ করতে বলা হচ্ছে।

এদিকে নিউইয়র্কে আবার বাড়ছে করোনা সংক্রমণ। এপ্রিলে সেখানে বিশ্বের যে কোনো একটি দেশের চেয়ে অধিক পরিমাণে করোনা সংক্রমণ রেকর্ড করা হয়েছিল। এতে গা শিউরে ওঠার মতো এক ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি হয় ওই রাজ্যে। কর্তৃপক্ষ কয়েক মাসের চেষ্টায় সেই সংক্রমণ কিছুটা কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু সোমবার গভর্নর অ্যান্ডু কুমো সতর্ক করে বলেছেন, কোভিড-১৯ পরীক্ষায় আবার পজিটিভের হার বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে শতকরা ১.৫ ভাগ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) ইউরোপ বিষয়ক আঞ্চলিক পরিচালক হ্যান্স ক্লুগ করোনাভাইরাসের মৌসুমি সংক্রমণ ব্যাধিতে পরিণত হওয়ার বিষয়টি নাকচ করে দেননি। বার্তা সংস্থা তাসকে দেয়া সাক্ষাৎকারে তিনি করোনাভাইরাসকে ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস গ্রুপের সমগোত্রীয় হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, সে হিসেবে এটি মৌসুমি সংক্রমণ ব্যাধিতে পরিণত হতে পারে।

ওয়ার্ল্ডওমিটারস ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এ পর্যন্ত বিশ্বজুড়ে আক্রান্তের সংখ্যা ৩ কোটি ৩৫ লাখ ৪৬ হাজার ৬৬৩। এর মধ্যে ১০ লাখ ৬ হাজার ৩৪৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। ইতোমধ্যে সুস্থ হয়ে উঠেছে ২ কোটি ৪৮ লাখ ৭৬ হাজার ১৯৭ জন।

এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা যুক্তরাষ্ট্রে। সেখানে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৭৩ লাখ ৬১ হাজার ৬১১। মৃত্যু হয়েছে ২ লাখ ৯ হাজার ৮০৮ জনের। আক্রান্তের হিসাবে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে ভারত। দেশটিতে মোট আক্রান্তের সংখ্যা ৬১ লাখ ৪৩ হাজার ১৯। এর মধ্যে ৯৬ হাজার ৩৫১ জনের মৃত্যু হয়েছে। ব্রাজিলে আক্রান্তের সংখ্যা ৪৭ লাখ ৪৮ হাজার ৩২৭। এর মধ্যে ১ লাখ ৪২ হাজার ১৬১ জনের মৃত্যু হয়েছে।

মাত্র ১৫-৩০ মিনিটের মধ্যে কোভিড-১৯ পরীক্ষার ফলাফল জানাতে সক্ষম এমন কিট বিতরণ করা হলে দরিদ্র আর ধনী- সব দেশেই কমে যাবে সংক্রমণের গতি।

দুইটি কোম্পানি থেকে মোট ১২ কোটি অ্যান্টিজেন টেস্ট কিট সরবরাহ করা হবে নিম্ন বা মধ্যআয়ের দেশগুলোতে। প্রতিটি কিটের দাম পড়বে ৫ ডলার (৪৫০ টাকা) বা তারও কম।

বিবৃতিতে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, আমাদের বিশ্ব এক বেদনাদায়ক মাইলফলক পৌঁছেছে। এ মহামারিতে ১০ লাখ মানুষের প্রাণহানি হয়েছে। এটি মনকে যন্ত্রণা দেয়ার মতো একটি সংখ্যা। আমাদের অবশ্যই প্রত্যেক জীবনের দিকে দৃষ্টি রাখতে হবে।

ভারতে ৬০ লাখ করোনা রোগীর মধ্যে ৫০ লাখ সুস্থ : ভারতে সংক্রমণের সংখ্যা ৬০ লাখ ছাড়িয়েছে। তবে আশার কথা- সুস্থতার সংখ্যাটাও পাল্লা দিয়ে বাড়ছে। ৬০ লাখ রোগীর মধ্যে ৫০ লাখ রোগীই সুস্থ হয়েছেন, যা বিশ্বের অন্য দেশের তুলনায় অনেক বেশি।

আরো সংবাদঃ

মন্তব্য করুনঃ

পাঠকের মন্তব্য



আর্কাইভ

April 2024
S S M T W T F
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
27282930  
20G